সূর্য ও এর সাথে মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ সকল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুকে একত্রে সৌরজগত বলে।

সূর্য ও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সূর্য-প্রদক্ষিণকারী তথা পরস্পরের প্রতি অভিকর্ষজ টানে আবদ্ধ

মহাজাগতিক বস্তুগুলিকে নিয়ে গড়ে একটি ব্যবস্থা।

আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রস্থল থেকে ২৬,০০০ আলোকবর্ষ দূরে কালপুরুষ বাহুতে এই গ্রহ ব্যবস্থাটি অবস্থিত।

৪.৬ লক্ষ কোটি বছর আগে একটি দৈত্যাকার আন্তঃনাক্ষত্রিক আণবিক মেঘের মহাকর্ষীয় পতনের ফলে সৌরজগতের উদ্ভব ঘটেছিল।

সমগ্র সৌরজগতের ভরের অধিকাংশ অংশই রয়েছে সূর্যে এবং অবশিষ্ট ভরের অধিকাংশ ধারণ করে রয়েছে বৃহস্পতি।

চারটি ক্ষুদ্রতর অভ্যন্তরীণ গ্রহ, অর্থাৎ বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল হল শিলাময় গ্রহ। চারটি বহিঃস্থ গ্রহ হল দানব গ্রহ।এগুলির মধ্যে বৃহত্তম গ্রহ দু’টি হল বৃহস্পতি ও শনি।

অপর দুই সর্ববহিঃস্থ গ্রহ ইউরেনাস ও নেপচুন তুষার দৈত্য নামে পরিচিত।

কারণ এগুলির প্রধান উপাদান হল জল, অ্যামোনিয়া ও মিথেনের মতো উদ্বায়ী, যেগুলি হাইড্রোজেন ও মিথেনের তুলনায় আপেক্ষিকভাবে উচ্চ গলনাঙ্ক-যুক্ত।

আটটি গ্রহই ক্রান্তিবৃত্ত নামে পরিচিত একটি প্রায় চ্যাপ্টা চাকতির ভিতর প্রায় বৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।

নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে অবস্থিত কাইপার বেষ্টনী ও বিক্ষিপ্ত চাকতি অঞ্চলে রয়েছে নেপচুন-উত্তর বস্তুগুলি।

এই সকল বস্তুর মধ্যে কয়েকটির আকার এতটাই বড়ো যে সেগুলির অভিকর্ষজ টান সেগুলিকে গোলকের আকার দানের পক্ষে যথেষ্ট।

এই ধরনের বস্তুগুলিকে বামন গ্রহের শ্রেণিভুক্ত করা হয়। চিহ্নিত অথবা স্বীকৃত বামন গ্রহগুলির অন্যতম হল সেরেস এবং নেপচুন-উত্তর বস্তু প্লুটো ও এরিস।

সকল ক্ষেত্রেই কোন গ্রহ, বামন গ্রহ বা ক্ষুদ্র গ্রহ-এর সাথে প্রাকৃতিকভাবে বিরাজমান বস্তুগুলোকে প্রাকৃতিক উপগ্রহ বলা হয়ে থাকে।

সৌর জগতের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪০ টি প্রাকৃতিক উপগ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে ১৬২ টি উপগ্রহ গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, ৪ টি উপগ্রহ ঘূর্ণায়মান আছে বামন গ্রহ-কে কেন্দ্র করে এবং অন্যগুলো ক্ষুদ্র সৌর জাগতিক বস্তু-কে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান আছে।

গৌণ গ্রহরাশির তালিকায় যে জ্যোতির্বস্তু গুলো আসতে পারে তা হলো বামন গ্রহ, গ্রহাণু, ট্রজানস, সেন্টর, কুইপার বেল্টের বস্তু সমূহ এবং ট্রান্স নেপচুনিয়ান বস্তু সমূহ।

প্রথম ক্ষুদ্র গ্রহ সেরেস আবিষ্কৃত হয় ১৮০১ সালের ১লা জানুয়ারি।আবিষ্কারের পর প্রায় পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত একে গ্রহ ভাবা হতো।

ক্ষুদ্র গ্রহ কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে ১০২ মিলিয়নের বেশি ক্ষুদ্র গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে যার ভিতর ৬১৯,০০০ ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত।

অটেন গ্রহাণু, অ্যামোর গ্রহাণু, অ্যাপোলো গ্রহাণু এবং অ্যাপিহেলা গ্রহাণু পৃথিবীর নিকটতম গ্রহাণু

মূল গ্রহাণু বেষ্টনীটি মূলত একটি কক্ষপথ যা পৃথিবী এবং মঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত।

সূর্য থেকে এই বেষ্টনীর নিকটবিন্দু এবং দূরবিন্দুর দূরত্ব যথাক্রমে ২.৩ এইউ এবং ৩.৩ এইউ।বৃহত্তম গ্রহাণু সেরেস ছাড়া বাকি সবগুলো গ্রহাণুই "ক্ষুদ্র সৌর জাগতিক বস্তু" শ্রেণীর মধ্যে পড়ে।

অবশ্য ৪ ভেস্তা ও ১০ হাইজিয়া নামক গ্রহাণু দুটি ভবিষ্যতে বামন গ্রহ শ্রেণীতে জায়গা করে নিতে পারে।

ছায়াপথ ৬০.১৯° (ক্রান্তিবৃত্ত) পর্যন্ত এর কক্ষপথ অপরিবর্তিত রাখে। ছায়াপথের দূরত্ব ২৭,০০০ ± ১,০০০ আলোকবর্ষ!

এর কক্ষপথের দ্রুতি ২২০ কিলোমিটার/সেকেন্ড! ছায়াপথ একটি অরবিটাল বা কক্ষপথ ঘুরতে সময় নেয় ২২৫–২৫০ মিলিয়ন বছর!

মূলত মহাবিশ্বের যে অঞ্চলটি সৌরজগতে রুপান্তরিত হয়েছে তা প্রাক-সৌর নীহারিকা নামে পরিচিত যার ব্যাস ৭,০০০ থেকে ২০,০০০ জ্যোতির্বিজ্ঞান এককের মধ্যে।

সূর্য থেকে বাইরের দিকে প্রবহমান বৈদ্যুতিক আধান-যুক্ত কণার একটি স্রোত সৌর বায়ু নামে পরিচিত।

এটি সৌরগোলক নামে পরিচিত আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমে একটি বুদবুদ-তুল্য অঞ্চল সৃষ্টি করেছে।

সৌরবিরতি হল সেই বিন্দু যেখানে সৌর বায়ুর চাপ আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমের বিপরীত চাপের সমান; এটি বিক্ষিপ্ত চাকতির সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত।

দীর্ঘকালীন ধূমকেতুগুলির উৎসস্থল হিসাবে বিবেচিত উর্ট মেঘ সম্ভবত সৌরবিরতির থেকে মোটামুটি এক হাজার গুণ দূরত্বে অবস্থিত।